করোনা ভাইরাস বনাম আমাদের পৃথিবী।

482
করোনা ভাইরাস বনাম আমাদের পৃথিবী
করোনা ভাইরাস বনাম আমাদের পৃথিবী

করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর সূত্রপাত চীনের উহান শহর থেকে। ক্রমাগত এর বিস্তৃতি ঘটেছে ইতালী, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র হয়ে এখন সারা পৃথিবীতে। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী শহর গুলো এখন ভুতড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। যেসব হোটেল-রেস্তুরা নারী-পুরুষে ছিল সরগরম, সে সব আজ বন্ধ। মরছে মানুষ। ধ্বসে পড়ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এক সময় যেসব পরাক্রমশালী রাষ্ট্রসমূহের হুঙ্কারে দূর্বল রাষ্ট্রসমূহ সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্থ থাকতো, সেসব রাষ্ট্রগুলোও অসহায়। শুধু অসহায় বললে ভুল হবে, চরম পর্যায়ের অসহায় অবস্থায় দিন গুনতে হচ্ছে তাদের। করোনা ভাইরাসের থাবায় সবল আর দূর্বল রাষ্ট্রের কোন ব্যবধান নেই। এত শক্তিশালী চিকিৎসা বিজ্ঞান যেখানে ব্যর্থ, সেখানে আকাশের মালিকের আশ্রয় প্রার্থনা ছাড়া তাদের আর কোন গত্যন্তর নেই। করোনা ভাইরাসে এখন অবধি ৪০ লাখের উপর নারী-পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২লাখ ৭১ হাজার ৯ শ’ ৫৪ জন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সরকারী হিসেব অনুযায়ী আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৬শ’ ৫৭ জন। মারা গেছেন ২শ’ ২৮জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে, মে মাসের ৩য় সপ্তাহ থেকে শুরু করে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের তা-ব শুরু হতে পারে বাংলাদেশে। এ এক ভয়ঙ্কর আভাস! মহান আল্লাহ না করুন, সে তা-ব যদি শুরু হয় এর সামাল দেওয়ার সক্ষমতা কি আমাদের দেশের রয়েছে ? আর আমদের জনগণ এ ক্ষেত্রে কতটুকু সচেতন রয়েছি! আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দেশবাসীকে সরকারি নির্দেশনা মানাতে গিয়ে যে পেরেশানি পোহাচ্ছেন তা পৃথিবীর আর কোন দেশে এমন পরিস্থিতি হয়েছে কি তা আমার জানা নাই। বরাবরের ন্যায় আমরা এক আদিম জাতি! নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষণ বেশি। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের থাবায় পৃথিবীর তাবৎ শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে এর ধারে কাছেও হয়তো আমরা নেই। তারপরও সরকার প্রধান সবটুকু ভালোবাসা এবং শক্তি নিংড়ে দিয়ে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে বাঁচাতে প্রাণান্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমরা যদি একটু গভীরে গিয়ে চিন্তা করি করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে মানুষরা ইহধাম ত্যাগ করছেন, তারাও তো আমাদের মতোই মানুষ ছিলেন। তাদের সবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছিল। তাদেরও একটি সুখের সংসার ছিল, সেই সুখের সংসারের সদস্যরা হচ্ছেন মাতা-পিতা, ভাই-বোন কিংবা স্ত্রী-পুত্র বা কন্যা। সেই স্বপ্ন শুধু ভঙ্গই হয়নি, হয়েছে সারা জীবনের জন্য ধুলিস্যাতও। যে পরিবারের কর্তা ব্যক্তিটিকে ঘিরে স্বপ্ন ছিল অন্যান্য সদস্যদের বেঁচে থাকার, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেই মানুষটি মারা যাওয়ার সাথে সাথে স্বপ্নগুলোও উবে যাচ্ছে। ল- ভ- হয়ে যাচ্ছে সেই পরিবার গুলো। মানুষ যদি না বাঁচে, তাহলে রাষ্ট্র বা অর্থনীতি দিয়ে কি হবে ? মানুষই অর্থনীতি, মানুষই শান্তির সোপান। তা ছাড়া বিশ্বের বড় বড় শিল্প কারখানা গুলোও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আরও কঠিন সময় পার করতে হবে করোনায় বেঁচে যাওয়া পরবর্তী মানুষদের। সেটা তারা হাড়ে হাড়ে টের পাবেন তখন।

করোনায় ব্যবসা- বাণিজ্যে চরমভাবে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তিলে তিলে গড়ে তোলা সাধের সেই শিল্প কারখানা বা ব্যবসা বাণিজ্য লোকসানের মুখে। গুনতে হচ্ছে বড় ধরণের ভর্তুকী। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা করোনা ভাইরাসের যাতাকলে পড়ে ব্যবসা থেকেই হারিয়ে যেতে পারেন! যারা ঋণী তারা হতে পারেন দেশান্তরীও। এখন কেউ কাউকে চিনি না, জানি না। করোনায় আক্রান্ত মানুষদের জানাযা বা সৎকারে দেখা গেছে প্রিয়জনও কাছে নেই। এ এক ভীতিকর অবস্থা ! এ দুনিয়াতেই যদি এহেন অবস্থার শিকার হতে হয় আমাদের, না জানি আখিরাতের দিনে কি অবস্থা হবে? সেই দিনের পুঁজি আমরা সংগ্রহ করছি তো ? আমরা এক অদৃশ্য শক্তির মুখোমুখি হচ্ছি। সেটাকে দেখা যায় না, যায় না ছোঁয়া। আজ শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহের মারণাস্ত্রগুলো বেকার। কোথায় আজ এত শক্তিশালী এ্যটম বোমা। কোথায় আজ ৭ম/৮ম নৌবহরগুলো? আজ সারা পৃথিবী এক ভয়ঙ্কর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। শক্তিশালী অনেক রাষ্ট্র নির্বিচারে নিরাপরাধ মানুষদেরকে হত্যা করেছে। এদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায়নি দুধের শিশু থেকে শুরু করে নারীরাও। যুদ্ধের ময়দানেও শিশু এবং নারীদের হত্যা করা যেখানে নিষেধ, সেখানে ওই কথিত শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো সেই ঘৃণ্যতম কাজটি করে যাচ্ছে। দয়া করে একটু ভাবুন তো, তারাও তো মানুষ। তাদেরও তো এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার ছিল! সেই অধিকার কেন কেড়ে নিলেন এর উত্তর কি দিতে পারবেন? ঠুনকো যুক্তি দেখিয়ে অনেক রাষ্ট্র দখল করেছেন। ঝরিয়েছেন বহু রক্ত এবং প্রাণ। এর দায় কে নিবে? কে এর উত্তর দিবে? আজ করোনা ভাইরাসের কারণে একেবারে কোমায় চলে যাচ্ছেন বাঁচার জন্য, বাঁচার অধিকার আপনাদের যেমন আছে, তাদেরও তো ছিল। আজ সেই সব জুলুমবাজ রাষ্ট্রপ্রধানদের হৃদয়ঙ্গম করার সুযোগ করে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। আমি চাই, অতিদ্রুত এ মহামারি থেকে পৃথিবীর মানুষ মুক্তিপাক। করোনা পরবর্তী পৃথিবী যেন এমন নিষ্ঠুর এবং বর্বর না হয় সেটাই মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করি।