এক কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে সংক্রমিত মহামারি ঠেকাতে সবরকম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কারনে বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রানঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার জন এবং ২৭ হাজার জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই করোনা। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ৪০ হাজার জন।
বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি মানুষ কোয়ারেন্টিনে,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,পরিবহন সেবা বন্ধ এবং বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত কারও ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই।কিন্তু এর শেষ কোথায়?সমাধান খুঁজতে ইতিহাসের পাতায় একটু চোখ বুলায়____
কাকতালীয় হলেও গত ৩শতাব্দী ধরে প্রতি শতকের ২০ সালেই ঘটে এমন মহামারি।প্রাণহানি হয় অসংখ্য মানুষের।
এই ২০ শতকে করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম যেমন__ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবে একটি ইনফোগ্রাফীক ভাইরাল হচ্ছে। এতে দাবী করা হচ্ছে,প্রতি ১০০ বছর অন্তর অন্তর যেকোন এক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে ২০২০ সালের নোভেল করোনাভাইরাসের মহামারির মিল রয়েছে। তাহলে করোনা ভাইরাসও কি এই ক্রম অনুসরন করে!!
আসুন একটু পেছনে তাকায়______
মহামারি প্লেগ(১৭২০)__
ইউরোপের সমাজ কাঠামো প্রায় পুরোপুরি ভেঙেই দিয়েছিল এই প্লেগ। ১৭২০ সাল থেকে পরবর্তী ২ বছরে গ্রেট প্লেগ অব মার্সেই তে ১ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।ফ্রান্সের শুধু মার্সেই শহরেই মারা যায় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। বিভিন্ন ইতিহাস গবেষক বলেন, চার বছর মেয়াদি প্লেগ মহামারি আকারে সংক্রমিত হওয়ায় ইউরোপের প্রায় ৪৫/৫০ ভাগ জনসংখ্যা বিলীন হয়ে গেছিলো,যা প্রায় ২০ কোটির কাছাকাছি।ভাবুন একবার।
কলেরা (১৮২০)__
১৮০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে কলেরা শুরু হয়।এটি মহামারি আকার ধারণ করে ১৮১৭ সালে। ১৮২৪ সাল পর্যন্ত এর প্রভাব থাকলেও ১৮২০ সালে তা সর্বোচ্চ আকার ধারণ করে।১৮২০ সালে ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় কলেরায় আক্রান্ত এলাকার দৃশ্য ছিল একেবারেই ভিন্ন। এশিয়াটিক কলেরা নামে পরিচিত এই মহামারি শুরু হয় কলকাতার ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে। পরে তা প্রায় অর্ধেক বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।এই মহামারিতে ঠিক কত লাখ লোক মারা গিয়েছিলো তা স্পস্ট জানা যায়নি। তবে পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ব্যাংককেই মারা গিয়েছিল প্রায় ৩০/৪০ হাজার মানুষ।কি নির্মম।
স্প্যানিস ফ্লু(১৯২০)__
স্প্যানিশ ফ্লু নামে নতুন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৯১৮ সালের ৪ মার্চ কানসাসের আমেরিকান সেনা সদস্যদের মধ্যে। পরে ঝড়ের গতিতে ছড়াতে শুরু করলো সেই জ্বর। সারা পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইল এই মরণব্যাধি। পরের দুই বছরে সারা পৃথিবীতে প্রাণহানি হয় কমপক্ষে ৫ কোটি মানুষের।
কোভিড১৯ করোনা (২০২০)__
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এই করোনা।এখন পর্যন্ত প্রানঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৯৭ হাজার জন এবং প্রায় ২৭ হাজার জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই করোনা।কি ভয়াবহতা।
চেক______
এই পরিসংখ্যানের ফ্যাক্ট চেক করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। কোভিড–১৯ রোগটি প্রতি শতকের ২০ সালে মহামারির সঙ্গে মিল থাকার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ভাইরাল প্রাদুর্ভাবের যে ইনফোগ্রাফিক ছড়িয়ে পড়েছে তার সাল–তারিখ ও বৈশিষ্ট্যে ভ্রান্তি রয়েছে।মানে স্পস্ট নয়।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এএফপিকে বলেছেন, নির্দিষ্ট ভাইরাস মৌসুমী হলেও এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই যে প্রতি শতাব্দীতে একবার ভাইরাল মহামারি ঘটে বা আগামীতেও ঘটবে।এটি ভিত্তিহীন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘কিছু রোগের মহামারি বারবার ঘটে। তবে কোভিড–১৯ মহামারি একটি অজ্ঞাত এবং সম্পূর্ণ নতুন রোগ।’
আমার মতামত__
৩শতাব্দী ধরে প্রতি ১০০বছর পরপর ঘটে যাওয়া মহামারিতে একেক সংক্রামকের সাথে কারোও মিল নেই।তবে যদি কিছু ভাইরাস সত্যিই মৌসুমী কিনা তা বলতে চান,তাহলে মানি_ বলবো,হ্যা মিল আছে।
আসলে আমরা একেকজন একেক মতাদর্শে বিশ্বাসী।আপনি কোন পথে হাটবেন সেটা একান্তই আপনার নিজস্ব ব্যপার।
এই আর্টিকেলটির তথ্যসূত্র____
List of epidemics
A Cruel Wind: Pandemic Flu in America, 1918-1920, Dorothy Ann Pettit & Janice Bailie, 2008
A Historical Relation of the Plague at Marseilles in the Year 1720, Bertrand-J-B, 1805
The Indian Medical Gazette, 1 August 1868