করোনা ভাইরাস_বাংলাদেশ ও আমার কিছু কথা।

করোনা মোকাবেলায় আমরা কতটা আন্তরিক!

2010
করোনা
করোনা

___বর্তমান সময়ে দেশের তথা বিশ্বের আতংকের নাম করোনা।বৈশ্বিক এই মহামারিতে বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রানঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার জন এবং ২৭ হাজার জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই ভাইরাস। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ৪০ হাজার জন।

বাংলাদেশে এই ভারাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ এবং মৃতের সংখ্যা ৫ জন।সুস্থ্য হয়ে বাড়ী ফিরেছেন ১২ জন সৌভাগ্যবান।

এটা মনে হতে পারে যে,এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থা খুব একটা মন্দ নয়।কিন্তু একবার কি আমরা ভেবেছি প্রায় ১৮কোটি জনসংখ্যার ঘনবসতির এই দেশে করোনা কতটা মারাত্নক/ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে !সেই সচেতনতা কি আমাদের যথেস্ট আছে!আমরা কতটুকু প্রস্তুত এর মোকাবেলায়!

প্রথম চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিলো গত বছর ডিসেম্বরে।সেই হিসাবে ভাইরাসটি বাংলাদেশে আসতে সময় নিয়েছে প্রায় তিন মাস।অন্য দেশ থেকে যে সব বিমানবন্দর দিয়ে ভাইরাসটি বাংলাদেশে আসলো,সেইসব বিমানবন্দরের স্ক্যানিংয়ের অবস্থা যদি দুর্বল না হতো,অথবা প্রত্যেককে ভালোভাবে চেক করে তবেই বিমানে উঠার অনুমতি দিতো,অথবা এই ভাইরাস এর ভয়াভহতা নিয়ে আমরা যদি যথেস্ট সচেতন হতাম,তাহলে হয়তো বাংলাদেশে এই ভাইরাস ঢুকতে পারতো না। আমাদের স্ক্যানিং ব্যবস্থা যথেস্ট মানসম্পন্ন থাকলে এমনটা নাও হতে পারতো।আমরা এর দায় কনোভাবেই এড়াতে পারি না।বিশ্বে কেভিড১৯ ভাইরাস ধরা পড়ার পর প্রায় তিন মাস সময় পেয়েও ভালো মানের থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা আমরা করতে পারিনি।এটা আমাদের বড় দুর্বলতা।

যদি বলি বৈশ্বিক এই মহামারি রোধে আমদের পূর্ব থেকেই একটু গাফলতি ছিলো,এটা বলাও দোষের কিছু না।আমাদের উচিৎ ছিলো সমস্ত আন্তর্জাতিক রুট অনেক আগেই বন্ধ করে দেওয়া।স্থল বন্দরগুলোর দিকে প্রায় কোনো নজরই দেওয়া হয় নি।যদিও এখন আকাশ/নৌ/স্থল সমস্ত রুট বন্ধ আছে।কিন্তু আগে থেকেই দেশের মানুষকে এর মারাত্নক পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করতে পারিনি।

অনেকটা দেরিতে হলেও এখন দেশের মানুষ কিছুটা হলেও এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে।বাংলাদেশ সরকার করোনা মোকাবেলায় যথেস্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছে।দেশের প্রায় সব জায়গাই এখন ১০দিনের লক ডাউন।এটা সম্পূর্ণ করতে রাস্তায় পুলিশ,সেনা,নৌ,বিজিপি টহলরত।সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে।বোঝানো হচ্ছে ঘরই নিরাপদ। দেরিতে হলেও সরকার গুরুত্বপূর্ণ দারুন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়া,প্রায় পুরো দেশে লকডাউন করা,দীর্ঘমেয়াদে সরকারি ছুটি দেওয়া, পরীক্ষা স্থগিত করা,এসব পদক্ষেপ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভালো ভূমিকা রাখবে।প্রয়োজন হলে লকডাউন এর সময় বাড়তে পারে।

যদিও শুরুতে আমাদের কাছে এই ভাইরাস নির্ণয় করার কীট যথেস্ট পরিমান ছিলো না,ছিলোনা পিপিই ও।কিন্তু আশার কথা হচ্ছে এই যে,এখন আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমান ভাইরাস নির্ণয়কারী কিট এবং সুরক্ষা পিপিই পর্যাপ্ত পরিমান আছে।তাই সাধারন মানুষকে বলবো আতংকিত না হয়ে এই ভাইরাস মোকাবেলায় দেশকে সহযোগিতা করুন।আর এই কাজে নিয়োজিত সকল ডক্টর,নার্স তথা সকল স্টাফকেই জানায় আমার আন্তরিক ভালোবাসা ও সম্মান।

কিন্তু কথা হচ্ছে এই বেরসিক বেকুব জাতি কতদিন এটা মেনে চলতে পারবে।এর থেকেও লক্ষনীয় বিষয়,নিম্ন আয়ের মানুষ,যারা দিন আনে দিন খায় তারা কতদিন এভাবে শিকল বন্দির মত থাকতে পারবে! যদিও সরকার তাদের কথা বিবেচনায় নামমাত্র মূল্যে চাউল,ডাউল তেল সহ অন্যান্য বাজার দিচ্ছে।কিন্তু এটাই কি যথেস্ট!বিভিন্ন শ্রম পেশার মানুষ আজ আতংকে।

পরিশেষে কয়েকটি কথা,করোনা ভাইরাস অন্য দেশ থেকে আমাদের দেশে ঢুকছে।কিন্তু এটির প্রতিরোধে পূর্ব থেকেই যা যা করা সম্ভব ছিলো,তা আমরা সঠিকভাবে করিনি।আর যা এখন দৃশ্যমান হচ্ছে,সেটা অনেক দেরী হয়ে গেছে।এখন সতর্কতার জন্যে মাস্ক পরিধান,স্যানিটাইজার বা বেশিবেশি হাত ধোয়ার প্রচারণা চালানো হচ্ছে।এটা খুবই ভালো দিক।

কিন্তু যারা নিয়মিত মাস্ক পড়ছেন,বারবার হাত ডেটল,হেক্সিসল দিয়ে ,মুখ সাবান দিয়ে পরিস্কার করছেন,তারা কি ভেবেই নিয়েছেন যে,নিজেরা পরিচ্ছন্ন থাকলেই করোনামুক্ত থাকতে পারবেন!মোটেও না।

আপনার আশেপাশে যারা আছেন বা আপনার বাসার যে কোন সদস্য যদি পরিচ্ছন্ন না থাকেন,তাহলে কি হবে!মনে রাখবেন,আপনার বাসার একজন সদস্যই সথেস্ট আপনার বাড়ীতে করোনাকে দাওয়াত দিয়ে আনতে।

সুতরাং,এককভাবে করোনা ভাইরাসমুক্ত থাকার ব্যাধী এটা না। সত্য বলতে আমরা নিজেরা ব্যক্তিগত ভাবে বা জাতীয়গত ভাবে, কোনোভাবেই তা অনুধাবন করতে পারছিনা।নিজেরা তথা পরিবার,তথা দেশ, কাউকেই নিরাপদ রাখছি না।

সুস্থ্য থাকুন,নিরাপদ থাকার চেস্টা করুন।দেশকে ভালবাসুন ,ভালো রাখুন