চীনের উহান থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। মরণঘাতী এই ভাইরাসে মৃত্যু সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে। নতুন সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্ব যেন অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে। এমন সময় সেই চীনে আরেকটি নতুন ভাইরাসে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ওই ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘হান্তা ভাইরাস’।
টানা তিনমাসের প্রাণপণ লড়াইয়ে করোনাভাইরাস প্রায়ই নিয়ন্ত্রণে এনেছে চীন। গত কয়েকদিন দেশটিতে নতুন করে তেমন কেউ আক্রান্ত হয়নি। তবে বিদেশফেরত নাগরিকদের মাধ্যমে দেশটিতে আরেক দফা মহামারির মুখোমুখি চীন। নতুন করে আবার বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা।
এই মহামারির মধ্যে চীনে নতুন করে খবর এসেছে, দেশটিতে `হান্তাভাইরাস` নামে নতুন এক ধরণের ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হয়েছে। ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়ানো নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্য একজন মারা গেছেন।
করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে হান্তাভাইরাসের নাম শুনে নতুন আতঙ্কে মানুষ। অনেকের প্রশ্ন, এই হান্তাভাইরাস আবার কী? এর লক্ষণগুলোও বা কী? আর এ ভাইরাস কি করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর?
হান্তাভাইরাস নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকের বিশ্বাস, করোনার মতো এই ভাইরাসও চীন থেকে উদ্ভব। বর্তমানে সোশাল মিডিয়াতে অন্যতম শীর্ষ ট্রেন্ড হিসেবে চলছে হান্তাভাইরাস। করোনাভাইরাসের সঙ্গে এখনও মানুষের যুদ্ধ থামেনি, এর মধ্যে হান্তাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে কি-না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছে অনেকে। এটা মানুষের মথ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। অনেকে মনে করছে, এটা চীনের ছড়ানো আরেক ভাইরাস, যা নতুন করে মহামারি তৈরি করবে।
আসুন নতুন এই ভাইরাস কি এবং এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষন ই বা কি? সে সম্পর্কে জেনে আসি_____________
হান্তাভাইরাস কি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার মতো ভয়াবহ নয় হান্তাভাইরাস। এটি মানবদেহ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয় না। তবে এই ভাইরাস বহন করে ইঁদুর। ভাইরাস বহনকারী কোনও ইঁদুরের মল বা মূত্রের সংস্পর্শে আসলে মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়। পুরোপুরি সুস্থ ব্যক্তি হলেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভাইরাস বহনকারী ইঁদুর কোন খাবারে মুখ দিলে সেখান থেকেও সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।
সেন্টার
ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) বলছে, হান্তাভাইরাস এক একটি ভাইরাসগোষ্ঠী, যা মূলত ইঁদুর থেকে সংক্রামিত হয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ দেখা যায়। অঞ্চলভেদে হান্তাভাইরাস ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। আমেরিকাতে ‘নিউ ওয়ার্ল্ড’ হান্তাভাইরাস হিসাবে পরিচিত, অন্যদিকে ইউরোপ ও এশিয়াতে এটি ‘ওল্ড ওয়ার্ল্ড’ হান্তাভাইরাস হিসাবে পরিচিত।
নিউ ওয়ার্ল্ড হান্তাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ফুসফুসজনিত উপসর্গ দেখা
দিতে পারে, অন্যদিকে ওল্ড ওয়ার্ল্ড হান্তাভাইরাসে মুত্রাশয়জনিত উপসর্গ দেখা
দেয়। সঙ্গে রক্তক্ষরণ ও জ্বর হতে পারে।
হান্তাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক লক্ষন এমন হতে পারেঃঃ
নিউ ওয়ার্ল্ড হান্তাভাইরাসের লক্ষণ:-এইচপিএস’র প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে ক্লান্তি, জ্বর এবং উরু, পশ্চাতদেশ, পিঠ, কাঁধসহ শরীরের বিভিন্ন পেশিতে ব্যথা হতে পারে। সংক্রামিত ব্যক্তি মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, ঠাণ্ডা লাগা এবং পেটের সমস্যায়ও ভুগতে পারে। লক্ষণগুলো একটু দেরিতেও চার থেকে ১০ দিন পর দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আক্রান্তদের কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে, যা কিছুক্ষেত্রে মারাত্মক আকারও ধারণ করতে পারে।
ওল্ড ওয়ার্ল্ড হান্তাভাইরাসের লক্ষণ:-এইচএফআরএস’র ক্ষেত্রে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পরে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণগুলোর বিকাশ ঘটে। তবে কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো দেখাতে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র মাথাব্যথা, পিঠ ও পেটব্যথা, জ্বর, সর্দি, বমি বমি ভাব এবং ঝাপসা দৃষ্টি। অন্যদিকে, দেরিতে দেখা দিলে নিম্ন রক্তচাপ, তীব্র শক, রক্তনালীতে ছিদ্র ও তীব্র কিডনি ফেইলিউর হতে পারে।
এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে আতংকিত না হয়ে একজন বিশেষজ্ঞ র পরামর্শ নিতে হবে।
তাই আমাদের নিজেদের সচেতনতায় পারে এই ভাইরাসের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে।নিজেদের সমস্ত খাবার ঢাকা রাখা,বাসা-বাড়িতে ইদুরের প্রকোপ যেন না হয়,সেদিকে যথেস্ট নজর রাখা জরুরী।
আতংকিত না হয়ে বুধিমত্তার সাথে প্রতিহত করুন।